করিম খাঁ মাগরিবের নামাজের পরে মসজিদে বসে সূরা “ওয়াকিয়া” পড়ছে। হাদিসে আছে এই সুরা তেলাওয়াত করলে - সে কখনও উপবাস থাকবে না। করিম খাঁ সাধারন ক্লার্ক হয়েও যে পরিমান সম্পত্তি করেছেন তাতে তার বা তার পরবর্তী প্রজন্ম কেউ ই উপবাস থাকার কথা না। করিম খা’র মন খুশি কারণ তার বড় মেয়ের জামাই আজ ব্যাংকের ম্যানাজার হয়েছেন। খুশির ব্যাপার হলো এই পোস্টে অনেক উপরি কামাই থাকে, উপরি কামাই না থাকলে তো আসলে হয় না। করিম খাঁ এটা ভেবে একটা প্রশান্তি পাচ্ছে, যাক এবার একটা কিছু হলো।
আজ কিছুতেই সূরা টি মনোযোগ দিয়ে পরতে পারছেনা, বারবার শুধু ভিন্ন ভিন্ন রকমের চিন্তা ভাবনা ঢুকে যাচ্ছে মাথায়।
করিম খাঁ এই নিয়ে তিন-তিন বার আবার প্রথম থেকে শুরু করে অবশেষে শেষ করে মসজিদ থেকে বের হলো।
বাসার দারোয়ান - ফজলু, চিকন কাঠি দিয়ে দাতের ফাক দিয়ে কি যেনো বের করে হাতে নিয়ে দুই আঙ্গুলে ঘুরিয়ে আবার টোকা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। করিম খা একটু দূর থেকেই ডেকে জিজ্ঞেস করে
- কি রে ফজলু কি অবস্থা, নামাজ , কালাম কিছু নাই? কি করতেছিস এখানে?
- স্যার, গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাইলাম।
- হ্যা, তা, কি হইছে?
- দাতের ফাকে আইটকা থাকা মাংস বের করে ভাবতেছি, ৮৫০ টাকা কেজি’র মাংসের এই অংশের দাম ই তো হইবো ৪/৫ ট্যাকা। কি বলেন স্যার?
- তা হইতে পারে, মাইপা দেখার দরকার। যাই হোক, শোন, নিয়মিত নামাজ পড়,
মাগরিবের নামজের পরে সূরা “ওয়াকিয়া”পড়লে আর কোন অভাব থাকবে না। আমার আল্লায় দিলে, দেখ, ৪ টা বাড়ি হইছে, এই গুলো কে দিছে, বল?
ফজলু দাঁতের ফাকের মাংস হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে, শক্ত হলেই টোকা দিয়ে ফেলে দিবে। করিম খা একা একা হেটে চলে যাচ্ছে, এই সবেরই মালিক – আল্লাহ, আল্লাহ।
------------------------------
বজলুর মেয়ে – জোনাকির বেশ জ্বর, লাল রঙের একটা জামা পরে শুয়ে আছে। সারা দিন বৃষ্টিতে ভিজার পর আইসক্রিম খাও্যার ফল এটা। বজলুর বউ এই নিয়ে সন্ধ্যা থেকে কথা বলে যাচ্ছে। সব কথার সারমর্ম এক লাইন হলো – এই জ্বরের একমাত্র কারন ‘বজলু আজ সার দিন কেনো বাসায় বসে আছে’।
বজলু বাসা থেকে বের হয়ে সোজা হাটছে সে জানে না কোথায় যাবে। অদৃশ্য এক অশান্তি কাজ করছে মাথার ভিতরে। মানুষের জীবন ভীষণ জটিল, এরকম অবস্থা কেন যে তৈরি হয়, মানুষ হয়ে এতো সল্প সময় বেচে থেকেও আবার কেনো, রোগ - শোক পেতে হবে, এর পর,তাহলে আবার কেনো মৃত্যু, মনে হচ্ছে একটা এলোমেলো গেইম ………।
কিছু দূর যেতেই মসজিদের পাশে করিম খার সাথে দেখা।
- কি বজলু কোথায় যাও?
- মেয়েটার হটাৎ করে আজ অনেক জ্বর, স্যার ………।।
- তাইলে তুমি মিয়া বাইরে কি করো। কোথায় যাও, আসো নামাজ পরে দোয়া করো। দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে ...
বজলু বুজতে পারে না কি উত্তর দিবে।
- স্যার ঔষধ কিনতে যাচ্ছি।
- শোনো বজলু, রোগ, শোক, হইলো আল্লাহর, পরীক্ষা, আবার কখনও - কখনও রহমত ও বলা যায়। ভরসা রাখো, ভরসা করো।
- তাহলে স্যার , এই রোগ, জ্বর কি আল্লাহ, ইচ্ছ করে দেয়। ইচ্ছা করে এতো কস্ট দেয়ার মানে কি?
- এইটা হলো, মিয়া, পরীক্ষা, পরীক্ষা দেওনাই জিবনে, নাকি পরীক্ষা ছাড়া পাশ করছো। পরীক্ষার কস্ট যেমন, রেসাল্ট তেমন,
বেশি ভালো হলে, মেডেল পায় দেখো না। ঠিক তেমনি তোমার আমার এই জীবনটা হলো একটা পরীক্ষার মাঠ।
আমরা যেমন পরীক্ষা দেবো মৃত্যুর পরে আমরা তেমন রেসাল্ট পাবো আর মেডেল ও তেমনই হবে।
এখন থেকে নিয়মিত নামাজ – কালাম পড়, দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে।
বজলু ঔষধ কিনার কথা বলে সামনের দিকে হেটে যায়।
করিম খার দিকে তাকালেই বজলুর মন থেকে কেমন যেনো, একটা ঘৃর্ণা ঘৃর্ণা ভাব হয়, এই লোকটাই কিছু দিন আগে,
দুই পকেটে ঘুষের টাকা নিয়ে যখন হেটে যাচ্ছিলো।
তাকে দূর থেকে মনে হচ্ছিলো, -
ছোট্ট একটা গোল মাংসের বল, সামনে একটা বড় মুখ, যেনো একবারে সব কিছু গিলে খাবে।
উপরের কাপর ফেটে, মাংস বের হয়ে যাচ্ছে এমন, বজলুর মুখে যেনো, বমি আটকে আছে, এই বুঝি পরে গেলো …………………।