করিম খাঁ - বাসা থেকে বের হয়েই আবার ঘরের ভিতরে ঢুকলেন, একটা ভুল হয়ে গেছে, মস্ত বড় ভুল, এই বয়সে তার অনেক ভুল হচ্ছে, এ ব্যপার টা ইদানিং সে খেয়াল করছে, মনে পরলেই খারাপ লাগে ।
ঠিক পাক্কা পাঁচ মিনিট বসে তারপর আবার অফিসের দিকে রওনা দিতে হবে, পাঁচ মিনিট বিরতিতে সব কিছু আবার নতুনের মতো হয়ে যায়। ঝুম বৃষ্টি হলে গাছের সবুজ পাতা যেমন হয় আর
কি। তাই পাঁচ মিনিট বসতে হবে, এর কম ও না বেশিও না।
এইতোহ কদিন আগেই, একটা বাচ্ছা ছেলে বাম পায়ের জুতা আগে পায়ে দেয়ার কারণে এমন ধমক দিয়েছিলো ছেলেটা কাঁদবে কিনা তাই নিয়েই ভয় পাচ্ছিলো। কি আশ্চর্য আজ কিনা নিজেই ঘর থেকে বাম পা দিয়ে বের হলো। এই টা একটা সুন্নত, করিম খাঁ, এই ধরনের সুন্নত কখনো ছাড়ে না। আজ কিভাবে যে হলো, মনে হচ্ছে নিজেই নিজেকে ধমক দেয়।
কি সুন্দর নিয়ম- বাম পা দিয়ে সব সময় বাথরুমে যেতে হবে আর ডান পা দিয়ে বের হতে হবে, মসজিতে আবার তার উল্টা, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়্ও তাই।
খাওয়ার বেলাও ডান হাত একটা বিশেষ কিছু।
সুন্দর ও ভদ্রতা মানেই যেনো ডান হাত। অফিসের পিয়ন বজলু সেদিন রুটি এনে টাকা ফেরত দিয়েছিলো বাম হাতে, কি বেয়াদপ।
ধমক দেয়াতেও ঠিক হয় নাই, সময় করে অন্য ভাবে বলতে হবে, আবার বলে কিনা সে বাম হাতি, আরে ব্যাটা ডান - সব কিছু হলো পবিত্র।
বেশি বুজলে যা হয় আর কি।
বজলুর ভিতরে একটা ব্যপার আছে – ভয় ডর হীন ভাবে কথা বলে মনে হয় কমিশনার সাহেব, না উদাহারন টা হয় নাই, কমিশনার কি ভয় ছাড়া কথা বলে, না সেদিকে যাওয়া যাবে না।
বজলু বলে হাতের আবার ডান বাম কি, দুইডা হাত তোহ একই রকম দেখতে, এতো বড়ো দুনিয়ার আল্লাপাক কি বইসা আছে আমি ডান হাত না বাম হাত দিয়া কামডা করলাম। -
কি নাপাক কথা ছিঃ ভাবতেই করিম খাঁ মেজাজ গুলিয়ে যায়। আল্লাপাক বসে থাকবেন ক্যান, এই টা কি ধরনের কথা।
এ সব হলো সব ফাজিলের ভাবনা, ফেইবুক জ্ঞানী, আমি বলি ফেইসবুক জ্ঞনী, কার না কার কথা শুনে এই সব শিখছে, আর সুযোগ পাইলেই পটর পটর করে, সাহস দেখে মনে হয় মাত্র বিদ্রোহী কবিতা পড়ে উঠছে। করিম খাঁ – নজ্রুল ইসলাম কে অনেক পছন্দ করে কিন্তু এই বিদ্রোহী কবিতার কিছু লাইন সে এড়িয়ে যেতে চায় সব সময়।
যাই হোক, বজলুর বিচার পরে করা যাবে, পাঁচ মিনিট শেষ এবার বের হতে হবে।
বজলুর সাহস কি পরিমানে বলি সেদিন ভেরিফিকেশনের ফাইল দেয়ার সময় টাকা দিতে গিয়ে আমারে কিনা বলে ‘ঘুষ’,
নাউজুবিল্লাহ!! এটা ঘুষ কেনো হবে?? তিন দিনের কাজটা আমি মাত্র এক বিকালে করে দিলাম, এটা ঘুষ?
তিন দিনে হলে ওনাকে তিন দুগানে ছয় বার আসতে হতো আরো কত কষ্ট তোহ আছে, এই জিনিসের জন্য তোহ ১০০০ টাকা উপহার নেয়া বরং কম। যাই হোক ঘুষ এটা না, অবসরে যাওায়া আগে এই বজলুর নামে রিপোর্ট করে যেতে হবে, এরা কাজে সমস্যা করে। সেদিন একটা ভালো ধমকই দিতাম কিন্তু নামজের সময় হয়ে যাওয়ার কিছু বলা হয় নাই।
দিনকাল কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে কখন বৃষ্টি নামে আর কখন রোদ বলা মুশকিল, এতো টুকু রাস্তা যেতে রোদ সরে গিয়ে আকাশ কালো হয়ে আসছে। আচ্ছা আগে কি বলা যেতো আকাশ দেখে কখন রোদ হবে বা কখন বৃষ্টি।
অফিসে আজ দেরি, নিশ্চিত, সমস্য নাই। একটা ব্যাপার করিম খার মনের ভিতর আবার খচখচিয়ে উঠল, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তোহ ডান পা দিয়েই বের হয়েছিলাম কিন্তু জুতা মুজা কি ডান দিন থেকেই শুরু করেছিলাম কিনা মনে পড়ছে না।
ভুলে যাওয়া রোগ শুরু হইছে কিনা কে না জানে!! – বজলুর মতো লোকদের কি হবে এই সব ভাবতেই কিনা এমন হচ্ছে। সেদিন অম্রপালি খেতে খেতে বজলু বলে
– স্যার বেহেশতে কি আম নাই” -?